ডায়াবেটিস সম্পর্কে ধারনা :
বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের সমস্যায় ভোগেন।ডায়াবেটিসকে বলা হয় নীরব ঘাতক. চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে “ডায়াবেটিক ফুট” বলে। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে শতকরা প্রায় ১০ জনেরও বেশি মানুষের পায়ের সমস্যা দেখা দেয়.
এক কথায় বলতে গেলে ডায়াবেটিস এর জন্য পায়ে যেই যেই সমস্যা হয় :
- ১.পায়ে ব্যথা,
- ২.পায়ের পাতা ভারী হয়ে যাওয়া,
- ৩.পা ফেলতে সমস্যা,
- ৪.পায়ের পাতায় নানা রকম চর্মরোগ,
- ৫.পায়ের পাতা ও গোড়ালি ফেটে যাওয়া,
- ৬.তৈরি হতে পারে ক্ষত,
কিভাবে বুঝবেন আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত?
- ১.আক্রান্ত পায়ে দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা ঝিমঝিম ভাব
- ২.পায়ে অনুভূতিহীনতা
- ৩.পায়ের নড়ন ক্ষমতা লুপ্ত হওয়া
- ৪.পায়ে ব্যথা
- ৫.হাঁটতে গেলে পায়ে ব্যথা বা অবসাদ
- ৬.পায়ে ঘা হওয়া
- ৭.আক্রান্ত পা বা পায়ের অস্থিসন্ধি হঠাৎ লাল হয়ে ফুলে যাওয়া
- ৮.আক্রান্ত পায়ে ফোড়া ও পায়ের অস্থিতে জীবাণুর সংক্রমণ
- ৯.পায়ের আঙুল এমনকি সমস্ত পায়ে ধরতে পারে পচন
- ১০রোগের জটিল পর্যায়ে পায়ের ক্ষত থেকে রোগজীবাণু সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়া।
তখনই বুঝবেন আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত।
কখন আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
- ১.রক্তে গ্লকোজের মাত্রা যদি অনিয়ন্ত্রিত থাকে
- ২.আপনার পা যদি অপাস হওয়া থাকে
- ৩. আপনি যদি ধূমপানকারী হন
- ৪.পায়ে যদি কড়া পড়ে
- ৫.আগে আপনার পায়ে যদি ঘা থাকে
- ৬.ডায়াবেটিসের জটিলতায় যদি আপনার চোখ বা কিডনি আক্রান্ত থাকে
- ৭.আপনি যদি কিডনি সমস্যার জন্য নিয়মিত ডায়ালাইসিস নেন
- তখনই আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
ডায়াবেটিসের জন্য পায়ে হওয়া সমস্যাগুলির প্রতিকার সমূহ:
‘প্রতিরোধই প্রতিকারের চেয়ে উত্তম পন্থা’- এ কথা মাথায় রেখে এই সমস্যা প্রতিরোধে নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যবিধি অনুস্মরণ করা যেতে পারে। যেমন-
- – প্রতিদিন একবার হলেও আপনার পা পর্যবেক্ষণে রাখুন।
- – সেই সাথে নিশ্চিত করুন পায়ের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা।
- পায়ের ত্বককে রাখুন সব সময় আর্দ্র। এ ক্ষেত্রে পায়ে নিয়মিত গ্লিসারিন বা ভ্যাসলিনের ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- পায়ের নখ ছোট রাখুন।
- বিরত থাকুন খালি পায়ে হাঁটা থেকে।
- প্রতিদিন পায়ের মোজা পরিবর্তন ও পরিষ্কার করে ব্যবহার করুন।
- পায়ের জুতা বা পাদুকা নিয়মিত দেখুন।
- পায়ের জন্য যথাযথভাবে মানানসই ও ফিট পাদুকা ব্যবহার করুন।
- পায়ে কোনো ক্ষত দেখা দিলে তা পরিষ্কার গজ বা স্ট্রিপ দিয়ে ঢেকে রাখুন।
- পায়ে কোনো ফোসকা পড়লে তা ফাটানো থেকে বিরত থাকুন।
- অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পায়ের কড়ার চিকিৎসার কোনো ওষুধ ব্যবহার করা কিংবা অযথা কাটাকাটি করা থেকে বিরত থাকুন।
- পরিহার করুন অতিরিক্ত গরম কিংবা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা তাপমাত্রার সংস্পর্শ।
- রক্তের গ্লুকোজ যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- বছরে নিয়মমাফিক একবার হলেও সমস্ত শরীরের পাশাপাশি পায়ের চেকআপ প্রক্রিয়া চালু রাখুন।
ডায়াবেটিসের কারণে পায়ে ব্যথা কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় :
ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
বরফ : আক্রান্ত স্থানে বরফ ঘষলে পায়ের ব্যথা অনেকটা প্রশমিত হয়। এতে পা ফোলাভাবও কমে। পাঁচ থেকে ছয়টি বরফের টুকরো গুঁড়া করে নিন। একে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে আক্রান্ত স্থানে চক্রাকারভাবে ম্যাসাজ করুন। প্রতিদিন একবার এভাবে ম্যাসাজ করুন।
দারুচিনির চা : দারুচিনির চা একটি সহজ ঘরোয়া উপায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের পা ব্যথা নিরাময়ের জন্য। এক গ্লাস পানির মধ্যে এক গ্রাম দারুচিনির গুঁড়া নিন। একে ১৫ মিনিট সেদ্ধ করুন। পায়ে ব্যথা কমাতে প্রতিদিন তিনবেলা এটি খান।
লবঙ্গের তেল : লবঙ্গের তেল কেবল পা ব্যথা কমায় না, এটি রক্ত চলাচল বাড়াতেও সাহায্য করে। ব্যথার স্থানে এটি দিয়ে ম্যাসাজ করুন। ভালো ফলাফলের জন্য দিনে কয়েকবার এই ম্যাসাজ করুন।
ঠান্ডা ও গরম পানির চিকিৎসা : এটি ডায়াবেটিসের কারণে পায়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। গরম পানি রক্তের চলাচল ভালো করে এবং ঠান্ডা পানি প্রদাহ কমায়।
প্রথমে হালকা গরম পানিতে তিন মিনিট পা ভেজানো। এরপর আরেকটি পাত্রে রাখা ঠান্ডা পানিতে দুই মিনিট পা ভেজানো। দিনে দুই থেকে তিনবার এভাবে করুন।
প্রয়োজনে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো ইতোমধ্যে আক্রান্ত পায়ের জন্য বিশেষভাবে তৈরিকৃত ফুটওয়ার ব্যবহারের দ্বারা পায়ে এই জটিলতার বিস্তার ও প্রকোপ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।